ঘরে শিশুর যত্ন করোনাকালে

করোনা নিয়ে বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। দিন দিন বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের বাড়ছে দুচিন্তা। আপাতত স্কুল-কলেজ বন্ধ আছে, শিশুরা ঘরেই অবস্থান করছে। ফলে শিশুরা সহপাঠী এবং বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা ও সময় কাটাতে পারছে না। এজন্য এইসময় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। শিশুদের ঘরোয়াভাবে কীভাবে যত্ন নেওয়া যেতে পারে তার কিছু টিপস দেওয়া হলো-
১) করোনাভাইরাস সম্পর্কে শিশুকে সঠিক ধারণা দিন। এটা একটা ভাইরাস, এটা মানবদেহের জন্য খুব ছোঁয়াচে রোগ যা একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। কেন আমাদের সবাইকে ঘরে থাকতে হবে? ঘরের বাইরে গেলে কী সমস্যা হতে পারে?
২) শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় বাবা-মা সন্তানের পড়াগুলো দেখিয়ে দিতে পারেন। পড়াশোনার একটা রুটিন করে দিতে পারেন। প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়ার টার্গেট করে দিতে পারেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পড়া শেষ করতে পারলে তাকে পুরস্কার দেবেন এভাবে তাকে পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে পারেন।
৩) শিশুকে নিয়ে টেলিভিশনে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, কার্টুন দেখতে পারেন। শিশুকে গল্প বা কবিতা শোনাতে পারেন। কিছু ইনডোর গেমস যেমন- ক্যারাম, লুডু ইত্যাদি খেলতে পারেন। তবে বেশি সময় নিয়ে টেলিভিশন দেখানো যাবে না। তাহলে আবার আসক্তি হতে পারে। টেলিভিশন দেখার সময় বাচ্চাদের ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিন।
৪) শিশুকে গঠনমূলক কাজের ধারণা দিন। বাসার ছোট ছোট কাজগুলো করাতে পারেন। বাবা-মা যখন কাজ করেন তখন কাজে সাহায্য করতে পারে। কাজের লোক যখন থাকবে না তখন কীভাবে চলতে হয় সেই শিক্ষা দিন।
৫) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিশুকে ধারণা দিন। কীভাবে হাত ধোবে, কত সময় নিয়ে ধোবে, হাঁচি-কাশির সময় কীভাবে শিষ্টাচার মেনে চলবে, হাঁচি কাশির পর কীভাবে টিস্যু ব্যবহার করবে, টিস্যু ব্যবহারের পর সেটা কীভাবে ডাস্টবিনে ফেলবে, লিফট ব্যবহার করলে লিফলেট বাটন কীভাবে চাপবে ও কীভাবে দুরত্ত্ব বজায় রেখে দাঁড়াবে এগুলোর সঠিক ধারণা দিন। বার বার হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নাক, মুখ এবং চোখে যেন বার বার হাত না দেয় সেই শিক্ষা দিন।
৬) বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে শিশুদের ওই ব্যক্তির থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে অসুস্থ ব্যক্তিকে আলাদা কক্ষে রাখুন।
৭) এ সময় শিশুর খাবারের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন। একই ধরনের খাবার যেন প্রতিদিন না খাওয়ানো হয়। খাবারের ভিন্নতা আনুন। শিশুকে পরিমিত খাওয়াতে শেখান। বেশি বেশি ভিটামিন- সি, জিঙ্ক ও আয়রন যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।
৮) শিশু অসুস্থ হলে ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করুন। এখন মোটামুটি সব ডাক্তারই ফোনে চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর যদি ভালো না হয়, যদি ডাক্তার স্বশরীরে দেখতে চান অথবা অতিপ্রয়োজনীয় হলেই কেবল ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিয়ে যান।
লেখক : ডা. নাজমুল ইসলাম
রেজিস্ট্রার
শিশু সার্জারি বিভাগ, ঢাকা শিশু হাসপাতাল