নারীর প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই

সম্প্রতি জাতিসংঘের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষ মিলিয়ে বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই নারীদের প্রতি কোনো না কোনোভাবে বিরূপ মনোভাবাপন্ন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকই মনে করেন, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা নেতা হিসেবে বেশি যোগ্য। ৪০ শতাংশের মতে, পুরুষেরা ব্যবসা ভালো বোঝেন এবং চাকরিতেও তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, এদের ২৮ শতাংশই মনে করেন, পুরুষেরা স্ত্রীকে মারধর করায় অন্যায় কিছু নেই।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আওতায় পরিচালিত এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের ৮০ শতাংশ মানুষ বসবাসকারী ৭৫টি দেশে এ জরিপ চালানো হয়।
‘ফার্স্ট ইউএনডিপি জেন্ডার সোশ্যাল নর্মস ইনডেক্স’ নামে এ প্রতিবেদনে নারীরা সমাজে সমান অধিকার অর্জনে যে অদৃশ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা এবং তথাকথিত ‘কাচের দেয়াল’ ভাঙার আহ্বান জানানো হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে নারীদের জন্য একটিও লিঙ্গবৈষম্যহীন দেশ নেই।
নারীদের প্রতি সবচেয়ে বেশি বিরূপ মনোভাবাপন্ন দেশ জিম্বাবুয়ে। দেশটির মাত্র ০.২৭ শতাংশ মানুষের মনে লিঙ্গবৈষম্য নেই। দেশটির ৯৬ শতাংশ মানুষই নারীদের শারীরিকভাবে দুর্বল মনে করেন। ফিলিপাইনে এর হার ৯১ শতাংশ।
লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের হার সবচেয়ে কম ইউরোপের ছোট্ট দেশ অ্যান্ডোরায়। সেখানকার ৭২ শতাংশ মানুষ লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে।
রাজনীতিতে নারীরা
জাতিসংঘের গবেষণামতে, বিশ্বের অর্ধেক মানুষই পুরুষদের আদর্শ নেতা মনে করেন। চীনে এর হার ৫৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯ শতাংশ মানুষ নারীদের নেতা মানতে নারাজ। দেশটিতে আজ পর্যন্ত কোনও নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
নিউজিল্যান্ডের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারী হলেও দেশটির ২৭ শতাংশ মানুষ পুরুষদেরই নেতা হিসেবে অগ্রাধিকার দেন।
বিশ্বজুড়ে সরকারপ্রধান হিসেবে নারীদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ১৯৩টি দেশের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১০টি দেশে নারী সরকারপ্রধান রয়েছেন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৫ জন।
তবে সংসদ সদস্য পদে নারীদের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বর্তমান বিশ্বের ২৪ শতাংশ সংসদ সদস্য নারী। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের হার সবচেয়ে বেশি। সেখানে ৩১ শতাংশ নারী সংসদ সদস্য রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১৭ শতাংশ।
নারী অধিকার বাস্তবায়নের উপায়
ইউএনডিপির মতে, ২০২০ সালে বেইজিং ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশনের (বেইজিং + ২৫) ২৫তম বার্ষিকীর ঘোষণাই হতে পারে আজ অবধি নারী ক্ষমতায়নের সবচেয়ে দূরদর্শী এজেন্ডা। একারণে বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ সমতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিভিন্ন দেশের সরকার ও সংস্থাগুলোকে শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে নারীদের ওপর বৈষম্যমূলক বিশ্বাস বা ধারণাগুলোর পরিবর্তনে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রণোদনা বৃদ্ধিতে নতুন নীতিমালা করার আহ্বান জানিয়েছে ইউএনডিপি। সেক্ষেত্রে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছে তারা। যেমন- শিশুদের দায়িত্বগুলো সমভাবে ভাগ করে নেয়া, সশস্ত্র বাহিনী ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো পুরুষ-অধ্যুষিত খাতে নারীদের যোগদানে উৎসাহিত করতে কর ব্যবহারের ব্যবস্থা করা।
ইউএনডিপি জেন্ডার টিমের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রাকেল লেগুনাস বলেন, ‘#মিটু, #নিউনামেনোস, #টাইমসআপ… তরুণ নারীবাদীদের অংশগ্রহণে আজ বিশ্বজুড়ে যে নারী অধিকারের বিক্ষোভ দেখছি, তাতে ইঙ্গিত করছে যে, আমাদের অন্যরকম বিশ্ব গড়তে নতুন বিকল্প দরকার। যদি দুই দশক আগের বেইজিং ঘোষণাপত্রের এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লিঙ্গভিত্তিক সমতা অর্জনে প্রয়োজনীয় গতি বা অগ্রগতি দেখতে চাই, তবে পক্ষপাত ও কুসংস্কারের বাধা অতিক্রম করতে আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
সূত্র: ইউএনডিপি, বিবিসি